রমজান মাস তাকওয়া অর্জন করার মাস। এ মাসে আপনি যেকোনো ইবাদত করলে অন্য মাসের তুলনায় ৭০ গুন বেশি সাওয়াব অর্জন করতে পারবেন। রোজার বিশেষ আমল করে সেই সাওয়াব এর পরিমাণ আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে নিতে পারেন। বছরের বাকি ১১ মাস যদি আপনি একটি নেকি অর্জন করেন, তবে আপনার আমলনামায় মাত্র ১টি নেকি জমা হবে। কিন্তু, রমজান মাসে ১টি নেকি অর্জন করলে, ১টি নেকির বিনিময়ে আপনার আমলনামায় ৭০টি নেকি জমা হবে। আজকে আমি আপনাদের সাথে এমন কিছু রমজান মাসের বিশেষ আমল নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো করলে আপনি অধিক পরিমাণে সাওয়াব অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে আমাদের সকল ইবাদত এর মূল্য অন্যান্য মাসের ইবাদত এর তুলনায় ৭০ গুন বেশি। আমরা যদি রমাদান মাসে ১ টাকা দান করি, তবে বছরের বাকি ১১ মাস ৭০ টাকা দান করার সমান সাওয়াব পাবো। ১ রাকাত নামাজ পড়লে ৭০ রাকাত নামাজ পড়ার সাওয়াব পাওয়া যাবে এই মাসে। তাহলে আপনি ভেবে দেখুন, আমাদের মুসলিমদের জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই মাস। অবহেলায় সময় না কাটিয়ে আমরা এই মাসে রমজানের বিশেষ দোয়া এবং রমজানের বিশেষ কিছু আমল করে আমাদের আমলনামার খাতা আরও ভারি করতে পারি।
রোজার বিশেষ আমল
রোজার মাসের বিশেষ কিছু আমল করে আমরা অনেক সহজেই অধিক পরিমাণ সাওয়াব অর্জন করে নিতে পারি। রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস, নাজাতের মাস। এ মাসে আমরা রোজা রাখার পাশাপাশি কিছু বিশেষ আমল করে আমাদের সকল গুনাহ আল্লাহ তায়ালার কাছে থেকে মাফ করে নিতে পারি। রমজান মাসে রোজা পালন করা প্রতিটি মুসলিম এর জন্য ফরজ। এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আমরা এই মাসে রোজা রাখার পাশাপাশি রমাদানের বিশেষ আমল করতে পারি।
এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে রোজার ১২টি বিশেষ আমল নিয়ে আলোচনা করবো।এগুলো আসছে রমজান মাসে পালন করলে আপনি পাবেন পূর্বের তুলনায় অধিক পরিমাণে বেশি সাওয়াব।এছাড়াও নিজে গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। তো চলুন দেখে নেয়া যাক রমজান মাসের বিশেষ আমলসমূহ।
তাহাজ্জুদ পড়া
রোজার বিশেষ আমলগুলোর মাঝে রয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আমরা সহজেই আমাদের রবের নৈকট্য অর্জন করতে পারি। দোয়া কবুলের জন্য সেহেরির আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমাদান মাসের পর সবথেকে উত্তম মাস হচ্ছে মহররম মাস এবং ফরজ নামাজের পর সবথেকে উত্তম নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৩) অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে সেটির গুরুত্ব কতটুকু সেটি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন।
সাহরি খাওয়া
সাহরি খাওয়া সুন্নাত। রমজান মাসের বিশেষ আমল এর মাঝে সাহরি অন্যতম। নবী কারিম (স.) রোজাদারকে সাহরি খেতে বলেছেন।সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই সাহরি খেতে হয়।তবে, সুবহে সাদিক এর কাছাকাছি সময়ে সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। কিন্তু, সাহরি খেতে এতো বেশি দেরি করা যাবে না যে সুবহে সাদিক হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
জামাতে নামাজ আদায় করা
রোজার বিশেষ আমল এর মাঝে জামাতে নামাজ আদায় করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। একা নামাজ পড়লে যে সাওয়াব পাওয়া যায়, তার তুলনায় জামাতে নামাজ আদায় করলে ২৭ গুন বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। আমরা জানি, রমজান মাসে যেকোনো ইবাদত এর বিনিময়ে অন্যান্য মাসের তুলনায় ৭০গুন বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। তবে রমজান মাসে যদি আমরা জামাতের সাথে নামাজ আদায় করি, তবে কতগুন বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারবো একবার ভেবে দেখুন।
জামাতে নামাজ আদায় করা আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। তাই, প্রতি ওয়াক্তে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করবেন ।
ইশরাকের নামাজ আদায় করা
অনেকেই ইশরাকের নামাজ সম্পর্কে জানে না। কারণ, ইশরাকের নামাজ তেমন ভালোভাবে কেউ ই পড়তে চায় না। কিন্তু, ইশরাকের নামাজ পড়ার আলাদা ফজিলত রয়েছে। এছাড়াও রোজার আমল সমূহ এর মাঝে ইশরাক এর নামাজ আদায় করলে অধিক নেকি অর্জন করা সম্ভব। ইশরাকের নামাজ সূর্যোদয়ের কিছু সময় পড়তে হয়। রমাদান মাসে ফজরের নামাজ একটু তারাতারি পড়া হয়। ফজরের নামাজ পড়ার পর অনেক সময় বাকি থাকে সূর্যোদয়ের। এ সময়ে আমরা কুরআন তিলাওয়াত করার পাশাপাশি রমজানের বিশেষ কিছু আমল করতে পারি।
আমাদের রাসুল (সা.) ইশরাকের নামাজ পড়তেন। তাই, আমাদের উচিত রমাদান মাসে ইশরাকের নামাজ পড়া।
রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো
রোজার বিশেষ আমল এর মাঝে একটি হচ্ছে রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো। একজন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করালে আমরা অনুরূপ সাওয়াব পাবো। আপনি যদি একজন রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করান, তবে সেই ব্যক্তি রোজা থেকে যে পরিমাণ সাওয়াব পাবে, ঠিক তত পরিমাণ সাওয়াব আপনিও পাবেন। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির সাওয়াব এর কোনো কমতি হবে না। আপনি রমজান মাসে নিজে রোজা থেকে সাওয়াব অর্জন করার পাশাপাশি রমজান মাসের বিশেষ আমল অন্য ব্যক্তিকে ইফতার করিয়ে আরও সাওয়াব অর্জন করতে পারেন।
একজন রোজাদার ব্যক্তিকে আপনি যদি একটি খেজুর দিয়েও ইফতার করান, তবু সাওয়াব পাবেন। ইফতার করানোর মানে এই না যে, আপনাকে উক্ত ব্যক্তিকে পেট পুরে খাওয়াতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য ইসলাম অনেক সহজ করে দিয়েছেন। রমজানের বিশেষ আমল করে আমরা অল্প সময়েই অনেক সাওয়াব অর্জন করতে পারি।
অধিক পরিমাণে দান করা
রমজানের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে অধিক পরিমাণে দান করা। রমজান মাসে দান করলে সেই দানের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। অল্প পরিমাণে দান করেও আমরা অধিক পরিমাণে দান করার সমান সাওয়াব পেতে পারি শুধুমাত্র রমজান মাসে। তাই, বেশি বেশি দান করুন। রোজার বিশেষ আমলগুলোর মাঝে বেশি পরিমাণে দান খয়রাত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা ১ টাকা দান করলে ৭০ টাকা দান করার সাওয়াব পেয়ে যাই। কেউ যদি রমজান মাসে ১০০০ টাকা দান করে, তবে তিনি ৭০,০০০ টাকা দান করার সমান সাওয়াব পাবেন। তাহলে আমাদের অধিক পরিমাণে দান করা উচিত কি না?
কুরআন তিলাওয়াত করা
রমজান মাস মুসলিমদের জন্য বিশেষ একটি মাস। কিন্তু, রমজান মাস বিশেষ কেনো? রমজান মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে। এই মাসে আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা। হাশরের মাঠে রোজাদার ব্যক্তির জন্য রোজা স্বয়ং নিজেই সুপারিশ করবে। রমজান মাসে আমরা কুরআন তিলাওয়াত করলে রোজার পাশাপাশি কুরআন ও আমাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। অতঃপর, আল্লাহ তায়ালা উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করবেন।
রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করলে আমরা সাওয়াব তো পাবই, সঙ্গে হাশরের মাঠে পাবো কুরআন এর সুপারিশ। কুরআন এর সুপারিশ পেলে আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ আরও সুগম হয়ে যাবে। তাই, আসছে রমজান মাসে অবশ্যই রোজার বিশেষ আমল গুলো করবেন।
ওমরাহ পালন হজ্জের সমতুল্য
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে ওমরাহ পালন করলে সেটি হজ্জের সমতুল্য। রোজার বিশেষ আমল এর মাঝে আমরা যদি রমজান মাসে একটি ওমরাহ পালন করি, তবে সেটি আমাদের আমলনামায় একটি হজ এর সমতুল্য হয়ে যাবে। তাই, আসছে রমজান মাসে সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই একটি ওমরাহ পালন করবেন।
ইস্তেগফার বেশি পড়া
রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস, নাজাতের মাস। এই মাসে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়লে আমাদের আমলনামা থেকে আল্লাহ তায়ালা সকল গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। তাই, আমাদের উচিত বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া। রমজান মাসে ইস্তেগফার পড়লে তা অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রোজার বিশেষ আমল এর মাঝে ইস্তেগফার পড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়বেন।
সালাতুত তারাবীহ পড়া
তারাবিহ এর নামাজ রোজার বিশেষ আমল এর মাঝে একটি। রমজানের বিশেষ আমল তারাবিহ এর নামাজ পড়ে আমরা আমাদের পূর্বের সকল গুনাহ মাফ পেতে পারি। হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব পাওয়ার আশায় সালাতুত তারাবিহ আদায় করবে, তার অতিতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।" রমাজান মাসের বিশেষ আমলগুলোর মাঝে আমাদের অবশ্যই ২০ রাকাত করে সালাতুত তারাবিহ পড়া উচিত।
ইতিকাফ করা
ইতিকাফ শব্দের অর্থ হচ্ছে অবস্থান করা। সবার থেকে আলাদা হয়ে নামাজ, রোজা আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া, ইস্তেগফার ও অন্যান্য ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার জন্য একাকি কিছু সময় ব্যয় করা। আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইকুম ওয়া সাল্লাম নিজেই এবং তার সাহাবীগণ রমজান এর শেষের দশ দিন ইতিকাফ করতেন।
লাইলাতুল কদর তালাশ করা
রমজান মাসে একটি রাত্রি রয়েছে, যেটি হাজার মাসের তুলনায় উত্তম। আল-কুরআনে রয়েছে : ‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪] একদা এক হাদিসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫] তাহলে বুঝতেই পারছেন, লাইলাতুল কদর এর রাতের মর্যাদা কত বেশি। রমজান মাসের শেষ দশ দিন আমাদের অবশ্যই রোজার বিশেষ আমলগুলো করা উচিত বেশি সাওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে।
0 মন্তব্যসমূহ