Ticker

6/recent/ticker-posts

স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে? - Ferdous Academy

    স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে- প্রিয় পাঠক অনেকে জানতে চাই স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে? যারা বিষয়টি জানেন না তাদের জন্য আমাদের আজকেই এই পোষ্ট। আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করব রোজা কি? কি ক কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়? এবং আজকের প্রধান আলোচ্য বিষয় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে কি ন? তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

    স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে

    রোজা কি

    রোজা ইসলামিক ধর্মের একটি মুখ্য আমল যা মুসলিমদের নিয়মিতভাবে পালন করতে হয়। রোজা বাঁ সিয়াম ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়। রমজান মাস ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাস এবং এটি মুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ মাস। রোজা বা রোযা হলো ফারসি শব্দ যার আরবী সাওম বা সাওম অর্থ: সংযম। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী রোজা হলো ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, যৌন অনৈতিকতা এবং সকল ভোগ-বিলাস থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। ইসলামী আইন অনুযায়ী, রমজান মাসে প্রতিদিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ।


    কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়

    রমজান মাসে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী রোজা রাখতে হবে। এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে পালন না করলে রোজা ভেঙ্গে যেতে পারে। শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তির জন্য রোজা ভঙ্গ করা গুনাহ। ইসলামী শরীয়তে রোজা ভঙ্গ করা নিষিদ্ধ হলেও এর শতভাগ পূরণ করা সম্ভব নয়।

    আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন কারণ (শরীয়ত অনুমোদিত) বা রোগ ছাড়া রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করবে, তার সারা জীবন রোজা রাখার দ্বারা এর ক্ষতিপূরণ হবে না। যদিও তিনি সারাজীবন রোজা রেখেছেন। (সুনানে তিরমিযী, হাদীসঃ ৭২৩)

    পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে- ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন, যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তা কামনা করো। আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা থেকে ঊষার শুভ্ররেখা স্পস্টরূপে তোমাদের কাছে প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত আসা পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

    উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ রোজাদারকে তিনটি বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলেছেন—ক. স্ত্রী-সম্ভোগ, খ. খাবার গ্রহণ, গ. পানীয় গ্রহণ। সুতরাং কেউ স্ত্রী-সম্ভোগ ও পানাহারে লিপ্ত হলে তার রোজা ভেঙে যাবে। এ ছাড়া আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে ‘হায়িজ’ বা নারীদের ঋতুস্রাবের কারণেও রোজা ভেঙে যায়

    রোজা ভঙ্গের কারণ এবং এর ক্ষতিপূরণের জন্য কাযা ও কাফ্ফারা (ক্ষতিপূরণ) উভয়ই প্রয়োজন। তা হলো স্ত্রী-সম্ভোগ ও ইচ্ছাকৃত পানাহার। রমজানের দিনে স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। প্রতিকার হিসেবে ব্যক্তিকে রোযা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। তবে ইমাম শাফেয়ি ও আহমদ (রহ.)-এর মত হলো কেউ ইচ্ছা করে কিছু খেলে শুধু কাজা করবে। কাফফারা দিতে হবে না। তাদের মতে, শুধু স্ত্রী-সম্ভোগের কারণেই রোজার কাফফারা ওয়াজিব হয়।

    ওষুধ ও ধূমপান পানাহারের অন্তর্ভুক্ত এবং স্বেচ্ছায় যেকোনো প্রকার বীর্যপাত স্ত্রী-সঙ্গমের অন্তর্ভুক্ত। কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে সহবাসে বাধ্য করে তবে স্ত্রী শুধু রোজা কাজা করবে এবং স্বামীর কাজা-কাফফারা দুটোই করবে।

    এছাড়া যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হলে প্রতিবিধান হিসেবে শুধু কাজা করতে হয়, কাফফারা দিতে হয় না। এমন কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে -

    ১. ইচ্ছা করে বমি করা
    ২. বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা।
    ৩. মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব।
    ৪. ইসলাম ত্যাগ করলে।
    ৫. গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন দিলে।
    ৬. কুলি করার সময় অনিচ্ছায় গলার ভেতর পানি প্রবেশ করল।ে
    ৭. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করালে।
    ৮. রোজাদারকে জোর করে কেউ কিছু খাওয়ালে।
    ৯. রাত অবশিষ্ট আছে মনে করে সুবেহ সাদিকের পর পানাহার করলে।
    ১০. ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করলে।
    ১১. মুখ ভরে বমি করলে।
    ১২. ভুলবশত কোনো কিছু খেয়ে, রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছা করে আরো কিছু খেলে।
    ১৩. বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেললে।
    ১৪. কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে।
    ১৫. জিহ্বা দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কোনো কিছু বের করে খেয়ে ফেললে।
    ১৬. অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেললে।
    ১৭. রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুতে কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার সময় ভেতরে পানি চলে গেলে। (ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)


    স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে?

    রোজা রেখে দুপুরের ঘুম হারাম নয়। এমনকি ঘুমের ভেতরে স্বপ্নদোষ হলেও স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভাঙে না। তবে স্বপ্নদোষের কারণে গোসল ফরজ। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে; তাদের ধারণা সঠিক নয়।

    আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তিনটি জিনিস রোজা ভঙ্গের কারণ নয়— বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ।’ (বায়হাকি, হাদিস : ৪/২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৩৯৬; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ৫২৮৭; নাসবুর রায়াহ : ২/৪৪৭; মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৩/১৭০; জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭১৯)

    উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আবু তালহা (রা.)-এর স্ত্রী উম্মে সুলাইম (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নিকট এসে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলা সত্যের বিষয়ে নিঃসঙ্কোচ। (তো আমার জিজ্ঞাসা এই যে,) কোনো নারীর স্বপ্নদোষ হলে কি তার উপর গোসল ফরজ হয়?’

    উত্তরে আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ। যদি সে পানি (ভেজা) দেখতে পায়।’ (সহিহ বুখারি : ১/৪২)

    এ হাদিস থেকে বোঝা যায়- ১. ছেলেদের মত মেয়েদেরও স্বপ্নদোষ হয়। ২. স্বপ্নদোষ হলে ছেলে-মেয়ে উভয়ের গোসল করা ফরজ হয়।


    স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যাবে সম্পর্কে শেষ কথা

    উপরোক্ত আলোচনা এবং হাদিসগুলোর রেফারেন্স থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, স্বপ্নদোষ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। সুতরাং রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যায়— এ ধারণা ঠিক নয়। (ফতওয়ায়ে শামি, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩৬৬)

    আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে রমজান পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।



    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ