Ticker

6/recent/ticker-posts

কম্পিউটার ভাইরাস কি? কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম জেনে নিন

    আমরা যারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করি তারা সকলেই কম বেশি কম্পিউটার ভাইরাস এর সাথে পরিচিত। কিন্তু আমরা প্রায়শই কম্পিউটার ভাইরাস এর বিষয়ে সচেতন থাকি না। যখন দেখি আমাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ঠিক মতো কাজ করছে না যেমনঃ কম্পিউটার হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাঝে মাঝে হ্যাং হওয়া, কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যায় পতিত হয় তখনই কেবল আমরা কম্পিউটারের ভাইরাস নিয়ে জানার চেষ্টা করি বা এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুজি। যদি আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল দিয়ে সুষ্ঠভাবে ভাবে কাজ করতে চান তাহলে কম্পিউটার ভাইরাস কি? কম্পিউটার ভাইরাসের নামগুলি কি কি, কিভাবে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইলকে ভাইরাস মুক্ত রাখা যায় সেই বিষয়ে সকলেরই সম্যক ধারনা থাকা বাঞ্চনীয়। তাই আজকের পোষ্টে আমরা কম্পিউটার ভাইরাস কি? কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম সম্পর্কে জানব। তো চলুন শুরু করা যাক ---

    কম্পিউটার ভাইরাস কি

    কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন একটি কম্পিটার প্রোগ্রাম বা ফাইল যা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর অনুমতি ব্যতীত বা অসচেতনবশত কম্পিউটারের সিস্টেমে ঢুকে কম্পিউটারের সিস্টেম ফাইলকে ধ্বংস করে ক্ষতিকর কিছু কোড প্রবেশ করাই। যার ফলশ্রুতিতে কম্পিউটার তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। আর কম্পিউটারে ভাইরাস কখন কিভাবে প্রবেশ করবে তা বোঝা বেশ কঠিন।

    কম্পিউটার ভাইরাস কি কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

    কম্পিউটার ভাইরাস কি কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

    কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

    ভাইরাস  জিনিসটা আসলে খুবই মারাত্নক তা সে মানুষের ক্ষেত্রে হোক বা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে হোক এর থেকে সহজে মুক্তি মেলে না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এর থেকে পরিত্রান পেতে হয় তাই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকা জরুরী। নিচে ১০টি ভয়ংকর কম্পিউটার ভাইরাসের নাম উল্লেখ করা হলোঃ

    ১. ক্রিপ্টোলকার (Cryptolocker)

    ২. স্টর্ম ওয়ার্ম (Storm Worm)

    ৩. স্যাসার ও নেটস্কাই (Sasser & Netsky)

    ৪. মাইডুম (MyDoom)

    ৫. এস কিউ এল স্ল্যামার

    ৬. নিমডা (Nimda)

    ৭. কোড রেড ও কোড রেড-২ (Code Red and Code Red II)

    ৮. দ্য ক্লেজ ভাইরাস (The Klez Virus)

    ৯. আইলাভইউ (ILOVEYOU)

    ১০. মেলিসা (Melissa)

    কম্পিউটার ভাইরাস কত সালে আবিস্কৃত হয় এবং কে আবিস্কার করেন

    কম্পিউটার ‘ভাইরাস’ ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর জন্ম লাভ করেন। এই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার লেহিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তাবিষয়ক এক সেমিনারে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণীতে অধ্যয়নরত একজন ছাত্র যার নাম ফ্রেড কোহেন প্রথম একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম প্রদর্শন করেন। তিনি একটি মেইনফ্রেম কম্পিউটারে ছোট্ট একটি সংকেত বা কোড প্রবেশ করিয়ে মাত্র পাঁচ  মিনিটের ভিতর উক্ত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলেন। 

    এছাড়াও তিনি এই একই কোড বা সংকেত ব্যবহার করে আরও চারটি প্রদর্শনীতে গড়ে মাত্র আধঘণ্টা সময়ে সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে পুরো কম্পিউটার সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন। 

    লেন অ্যাডলেম্যান যিনি কোহেনের উপদেষ্টা হিসেবে  পরিচিত। তিনি কোহেনের এই নিজে থেকেই নিজের কপি বা অনুলিপি সৃষ্টির প্রোগ্রামটিকে ভাইরাসের সাথে তুলনা করেন এবং ইহাকে ‘ভাইরাস’ নামে অভিহিত করেন। তখন থেকে এই ধরনের ক্ষতিকর প্রোগ্রামের নাম হয়ে গেল কম্পিউটার ভাইরাস।

    কিন্তু কিছু কিছু মানুষের মতে, এটাই প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস নয়। তাদের মতে ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ১৫ বছর বয়সীএক কিশোর যার নাম রিচ স্ক্রেনটা এমন একটি প্রোগ্রাম বা কোড লেখে, যা ফ্লপি ডিস্ক এর মাধ্যমে অ্যাপল টু কম্পিউটারকে সংক্রমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। এই প্রোগ্রামটি  প্রতি ৫০ বার পরপর কম্পিউটার রিবুটিংয়ের সময় একটি ছোট্ট বার্তা দেখাত। কিন্তু এই পুরো বিষয়টি ছিল মজা করার উদ্দেশ্যে। 

    রিচ স্ক্রেনটা ও তার বন্ধুদের গণ্ডির বাইরে কেউ এই বিষয়টি জানত না এবং এটিকে ভাইরাস বলা হতো না। আবার অনেকে বলে থাকেন কম্পিউটারের ১ম ভাইরাসের নাম ‘ক্রিপার’ যা ১৯৭১ সালে আবিস্কৃত হয়। রবার্ট (বব) থমাস নামে এক ব্যক্তি যিনি কেমব্রিজ ভিত্তিক বিবিএন এ কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে কর্মরত ছিল। তিনিই মূলত ‘ক্রিপার’ এর আবিস্কারক। তিনি ছোট একটা প্রোগ্রাম লেখেন, যা নিজে নিজেই রেপ্লিকা বা  অনুলিপি তৈরি করতে পারত। এটা ছিল পরীক্ষামূলক।

    কম্পিউটার ভাইরাস নামক প্রোগ্রামগুলো জীবদেহের ভাইরাসের মতোই আচরণ করে বিধায় কম্পিউটারের এই প্রোগ্রামগুলিকে কম্পিউটার ভাইরাস নামে  অভিহিত করা হয়। জীবদেহের ভাইরাস যেমন এক শরীর হতে অন্য শরীরে ছড়াতে সক্ষম, তেমনই কম্পিউটার ভাইরাস ও এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়াতে পারে। জীবদেহের ভাইরাস ও কম্পিউটার ভাইরাস দুটোই আকারে ছোট এবং ক্ষতিকর।

    কম্পিউটার ভাইরাস এর বৈশিষ্ট্য

    • কম্পিউটার ভাইরাস এক ধরনের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামগুচ্ছ।
    • কম্পিউটার ভাইরাস পুনঃ উৎপাদনক্ষম এবং এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সহজেই সংক্রমিত হতে পারে।
    • ভাইরাস স্থায়ী এবং অস্থায়ী ০২ ধরনের হতে পারে। 
    • ব্যবহারকারীর হস্তক্ষেপ ছাড়া ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে না।
    • এটি বহনের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
    • সব ভাইরাসই ম্যালওয়্যার কিন্তু সব ম্যালওয়্যার ভাইরাস নয়। 
    • বিভিন্ন রকম ভাইরাসের ক্ষতি করার ক্ষমতা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।


    কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ

    কম্পিউটারে ভাইরাস থাকার লক্ষণ গুলোর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো নিম্মরুপঃ

    • কম্পিউটার হঠাৎ করে রিস্টার্ট হওয়া।
    • কম্পিউটার চলতে চলতে হ্যাং হওয়া।
    • কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া।
    • কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মেমোরি হ্রাস পায় ফলে কম্পিউটারের গতি কমে যায়।
    • কম্পিউটার অন হতে বেশি সময় লাগে।
    • কাজ করার সময় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
    • হার্ড ডিক্সে ফ্রি  স্পেস কমে যায়।
    • কোন নতুন প্রোগ্রাম ইনস্টল করার সময় অনেক বেশি সময় নিবে।
    • কম্পিউটারে সেভ  করে রাখা ফাইলগুলি এমন নাম ধারন করবে যা পড়া যায় না।
    • অনেক ফাইল হিডেন করে দিতে পারে। 

    কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

    • ক্ষতিকর সফটওয়্যারগুলো চিহ্নিত পূর্বক কম্পিউটারের মেমোরি থেকে ডিলেট করা।
    • কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পুনরায় অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা। সি ড্রাইভ থেকে অপারেটিং সিস্টেম ফরমেট দিয়ে অপারেটিং সিস্টেম পুনরায় ইনস্টল করলে যেকোনো ধরনের ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 
    • কোন  সফটওয়্যার ইনস্টল করার  আগে ভালোভাবে  যাচাই পূর্বক ইনস্টল করা। 
    • ভালো  মানের এন্টি ভাইরাস ব্যবহার করতে হবে এবং  নিয়মিত স্কানিং করে অপারেটিং সিস্টেম কে ভাইরাস মুক্ত রাখতে হবে। 
    • ইন্টারনেট ব্যবহার করলে কম্পিউটার খুব সহজেই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে তাই ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। কোন সন্দেহজনক লিংকে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
    • ইন্টারনেট থেকে কোন  ফাইল বা সফটওয়্যার ডাউনলোড  করার সময় ভালোভাবে যাচাই বাচাই করে সেগুলো ভাইরাস মুক্ত আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে। 
    • কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম হলো পেন ড্রাইভ, কার্ড রিডার বা ফ্লপিডিক্স (যদিও ফ্লপি ডিক্সের ব্যবহার বর্তমানে নাই বললেই চলে)। এই ডিভাইস গুলি কম্পিউটারে প্রবেশের পূর্বে ভাইরাস মুক্ত আছে কিনা সেই বিষয়ে  নিশ্চিত হতে হবে। 
    • যে কোন শেয়ার ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা  অবলম্বন করতে  হবে। যেমন আপনার মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে বুলুটুথ ব্যবহার করে কোন কোন কিছু পারাপার করা যায় সেই ক্ষেত্রে উক্ত মোবাইল বা ল্যাপটপ ভাইরাস মুক্ত আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
    • পিসি টু পিসি নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে এক পিসি  হতে অন্য পিসিতে সংযোগ করা যায়। ফলে এক পিসিতে  ভাইরাস থাকলে অন্য পিসিও সহজেই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে স্বাভাবিক ভাবেই। তাই পিসি টু পিসি নেটওয়ার্কিং স্থাপনের পূর্বে অবশ্যি পিসি সমূহ ভাইরাস মুক্ত আছে কি না তা খেয়াল রাখতে হবে। 
    • ওয়াই ফাই ব্যবহারের ফলে পিসি থেকে মোবাইলে বা মোবাইল থেকে পিসিতে সহজেই  ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে তাই ওয়াইফাই ব্যবহারের পূর্বে পিসি বা মোবাইলে এন্টি ভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। 

    পরিশেষে 

     

    আজকের পোস্টে আমরা জানতে পারলাম যে কম্পিউটার ভাইরাস কি, কম্পিউটার ভাইরাস এর নাম, কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন, কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।  আশা করি আপনারা কম্পিউটারে ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এছাড়াও কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে যদি আরও কোন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাতে পারেন। বিষয় টি নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


    আরও পড়ে আসতে পারেন---






    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    1 মন্তব্যসমূহ