Ticker

6/recent/ticker-posts

সুরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ ।। surah ikhlas bangla ।। সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থসহ এর শানে নুযুল, তাফসীর এবং ফজিলত

    সূরা ইখলাস কুরআন মজীদের  ১১২তম ও অন্যতম ছোট সুরা ।সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ স্রষ্টার একত্ববাদের ঘোষণা সুরা ইখলাস ৪ আয়াত এবং ১ রুকু বিশিষ্ট যাতে মহান আল্লাহর পরিচয় ও মাহাত্ম্য অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সুরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মদিনায় হিযরতের পূর্বে মক্কায় অবতীর্ণ হয় ফলে এই সুরাটি মাক্কী সুরা। সূরা ইখলাস এমন একটি সুরা, যে সুরা তেলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষ অত্যাধিক ফজিলত ও নেয়ামত প্রাপ্ত হয়। 


    এই সূরাটিকে হযরত মুহাম্মদ (সা:) বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এই সুরার ৪টি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ও সত্তার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। এই সুরার নামের অর্থ থেকেই এর ফজিলত, মর্যাদা ও নেয়ামত প্রকাশ পায়।


    ইখলাস শব্দের অর্থ হলো- একনিষ্ঠতা, নিরেট খাঁটি বিশ্বাস, ভক্তিপূর্ণ উপাসনা।  শিরক থেকে নিজেকে  মুক্ত করে একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে ইখলাস বলে। এ সুরার মর্মার্থের ভিত্তিতে নামকরণ করা হয়েছে সূরা ইখলাস।


    সূরা এখলাছ ।। surah ikhlas bangla ।।  সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থসহ এর শানে নুযুল, তাফসীর এবং ফজিলত

      সূরা এখলাছ ।surah ikhlas bangla । সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থসহ এর শানে নুযুল, তাফসীর এবং ফজিলত 


    সূরা ইখলাস আরবী উচ্চারণ


    সুরা ইখলাস এর আরবি উচ্চারণ হলোঃ


    قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ

    ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ

    لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

    وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ


    সুরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ 


    সূরা ইখলাসের বাংলা উচ্চারণ নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। 


    কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ।

    আল্লা-হুসসামাদ।

    লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইঊলাদ।

    ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহূকুফুওয়ান আহাদ।


    সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ


    সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ নিম্নরুপঃ


    বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,

    আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,

    তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি

    এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।


    সূরা এখলাস এর শানে নুযুল


    হযরত আনাস (রা.) এই সুরার শানে নুযুল প্রসঙ্গে বলেন, খাইবারের কয়েকজন ইহুদি একদা মহানবী (সা.)-এর দরবারে এসে বলে, হে আবুল কাসেম! আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নূর থেকে, আদমকে মাটি থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখন আপনার রব সম্পর্কে আমাদের জানান, তিনি কোন বস্তুর থেকে সৃষ্ট? রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো জবাব দেননি। অতঃপর হজরত জিবরাঈল (আ.) সুরা ইখলাস নিয়ে আসেন।

     

    হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, একদা নাজরানের সাতজন খ্রিস্টান পাদ্রি মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলে, আমাদের বলুন, আপনার রব কেমন? তিনি কিসের তৈরি? মহানবী (সা.) বলেন, আমার রব কোনো জিনিসের তৈরি নয়। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত সুরা নাজিল করেন।


    আরও পড়ুনঃ আলহামদুলিল্লাহ সূরা এর ফজিলত


    সূরা ইখলাস এর ফজিলত


    সুরা ইখলাস আকারে ছোট হলেও এই সুরাটি অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ সুরা কারণ এই সুরায় আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তা বর্ণনা করা হয়েছে। এই সুরা পাঠ করলে অনেক নিয়ামত লাভ হবে তা বিভিন্ন হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে সুরা ইখলাস পাঠ এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফজিলত বর্ণিত হলোঃ


    কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ


    আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে সুরা ইখলাস বারবার পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে মহানবী (সা.)-কে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়। তখন মহানবী (সা.) বলেন, ‘ওই সত্তার শপথ! যার কুদরতের হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সূরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি : ৫০১৩; আবু দাউদ : ১৪৬১; নাসায়ি : ২/১৭১; মুআত্তা মালেক : ১/২০৮)


    মহানবী (সা.) একদা সাহাবিদের বলেন, তোমারা কি এক রাতে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? মহানবী (সা.) তখন বললেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৫, নাসায়ি, হাদিস : ৯৯৫)


    সুরা ইখলাস পাঠে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ হয়


    একদা আল্লাহর রাসুল (সা.) একদল সাহাবিদের যুদ্ধে পাঠান। তাদের মধ্যে একজনকে আমির বা সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি যুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে নামাজে ইমামতি করলে সুরা  ফাতেহা এবং অন্য সুরা পড়া শেষে নিয়মিত সুরা সুরা ইখলাস পাঠ করে নামাজ পড়িয়েছেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর সৈন্যরা মহানবী (সা.)-কে সে ব্যাপারে অবহিত করেন। তখন নবী কারিম (সা.) তাদের বলেন, ‘তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করো— কেন সে এরূপ করেছে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলে— সেনাপতি তাদের জানান, এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি এ সুরাকে ভালোবাসি।


    মহানবী (সা.) তখন সাহাবিদের বলেন, ‘তোমরা তাকে গিয়ে বলো, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৫; মুসলিম, হাদিস : ৮১৩; নাসায়ি, হাদিস : ২/১৭০)


    সুরা ইখলাস জান্নাত লাভের উসিলা

    হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে একবার এক সাহাবি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৭৪; তিরমিজি, হাদিস : ২৯০১)

    গুনাহ মাফ হয় সুরা ইখলাস পাঠে

    হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯৮)

    দারিদ্র্য দূর হয় সুরা ইখলাস পাঠে

    সাহল ইবনে সাদ সায়েদি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে দারিদ্র্যের অভিযোগ করে। তখন মহানবী (সা.) তাকে বললেন, ‘যখন তুমি ঘরে ফিরবে, তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে।’ এ আমল করার ফলে— কিছুদিনের মধ্যে তার দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়। (কুরতুবি : ২০/১৮৫)

    বিপদে-আপদে উপকারী

    হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকেল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তেলোয়াত করে, তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ি)

    হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ ইমানের সঙ্গে করতে পারবে জান্নাতের যেকোনো দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। (১) যে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে। (২) যে ব্যক্তি গোপন ঋণ পরিশোধ করবে। (৩) এবং যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে (তাফসিরে কাসির)।

    উল্লেখ যে, অনেকেই বলে থাকেন, সুরা ইখলাস ৩ বার পাঠ করলে সম্পূর্ণ কুরআনুল কারিম তেলাওয়াতের সাওয়াবের অধিকারী হয় বা কুরআন খতমের সমান। আসলে বিষয়টি এমন নয়। হাদিসের কোথাও সাওয়াব প্রাপ্তি কিংবা সম্পূর্ণ কুরআন খতম হওয়ার বিষয়টি বলা হয়নি।

    বরং যে ব্যক্তি এ সুরাটির মর্মার্থ বুঝে আল্লাহর বিশেষ গুণাবলীগুলো হৃদয়ে ধারণ করবে সে আল্লাহর একত্ত্ববাদ ও ক্ষমতায় একনিষ্ঠ বিশ্বাসী হিসেবে বেড়ে উঠবে। সে হবে প্রকৃত ঈমানদার। আল্লাহ তাআলার দরবারে এ গুণাবলীর বিশ্বাসই তাকে মর্যাদাবাদ করে দিবে।

    সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠের ফজিলত

    যে ব্যক্তি ‘ক্বুল হুঅল্লা-হু আহাদ’ শেষ পর্যন্ত ১০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে এক মহল (ঘর) নির্মাণ করবেন। এ কথা শুনে উমর বিন খাত্ত্বাব (রা.) বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি করে পড়ব হে আল্লাহর রাসূল! রাসূল (সা.) বললেন, আল্লাহও বেশি দানশীল ও বেশি পবিত্র।’ [মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৫৬১০]

    সূরা ইখলাস ২০০ বার পড়ার ফজিলত

    প্রতিদিন অজুর সাথে ২০০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করার দ্বারা ০৯ টি উপকার লাভ হবে।

    (১) আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত অসুন্তুষ্টির ৩০০ টি দরজা বন্ধ করে দিবেন। যেমন: শত্রতা, দূর্ভিক্ষ, ফিতনা ইত্যাদি।

    (২) রহমতের ৩০০ টি দরজা খুলে দিবেন।

    (৩) রিজিকের ১০০০ টি দরজা খুলে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা পরিশ্রম ছাড়া তাকে গায়েব থেকে রিজিক দিবেন।

    (৪) আল্লাহ পাক নিজস্ব ইলম থেকে তাকে ইলম দিবেন, নিজের ধৈর্য্য থেকে ধৈর্য্য এবং নিজের বুঝ থেকে বুঝ দিবেন।

    (৫) ৬৬ বার কুরআন শরীফ খতম করার সাওয়াব দান করবেন।

    (৬) তার পঞ্চাশ বছরের গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

    (৭) আল্লাহ পাক জান্নাতে ২০টি মহল দান করবেন। যেগুলো ইয়াকুত, মারজান,জমরুদ দ্বারা নির্মিত হবে এবং প্রত্যেকটি মহলে ৭০,০০০ দরজা হবে।

    (৮) ২০০০ রাকাত নফল পড়ার সাওয়াব অর্জিত হবে।

    (৯) পাঠকারী যখন ‍মৃত্যু বরন করবে তখন তার জানাযায় এক লক্ষ দশ হাজার ফেরেশতা অংশগ্রহন করবেন।

    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ইখলাসের ভাব ও মর্মার্থ নিজেদের মধ্যে ধীর বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর একত্ত্ববাদ ও ক্ষমতায় পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত মর্যাদা ও ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ