কম্পিউটার কি? কম্পিউটারের ইতিহাস বা কম্পিউটার পরিচিতি - বর্তমানে বহুল ব্যবহত ও দৈনন্দিন জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ন একটি যন্ত্র হলো কম্পিউটার (Computer)। বর্তমান যুগ ইনফরমেশন ও টেকনোলোজি নির্ভর হওয়ার ফলে এর চাহিদা ক্রমশই বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ মানুষ কম্পিউটার কি? এই সম্পর্কে জানলেও, কম্পিউটার প্রকৃতপক্ষে কিভাবে কাজ করে? এর প্রকারভেদ ও ব্যবহারবিধী ইত্যাদি বিষয় গুলো সম্পর্কে তেমন জানে না। আজকের পোস্টে আমরা সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
 |
কম্পিউটার কি? |
কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কাকে বলে? What is Computer in Bangla?
গ্রিক শব্দ “কম্পিউট”
(compute) শব্দ থেকে কম্পিউটার শব্দটি এসেছে।কম্পিউট শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। এক কথায় বলা যায় কম্পিউটার
(Computer) হলো এমন একটি ডিভাইস যা সুনির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসারে কাজ করে গাণিতিক গণনা সংক্রান্ত সমাধান খুব দ্রুত ও নির্ভূল ভাবে করতে সক্ষম।
বর্তমানে সভ্যতার বিকাশ এবং এর দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের ব্যাপক প্রভাব। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম কম্পিউটার আসে।
কম্পিউটারের জনক কে?
বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ কম্পিউটার তৈরির প্রথম ধারণা প্রদান করেন। তিনি সর্বপ্রথম ১৮৩৩ সালে এ্যানালটিক্যাল ইঞ্জিন নামে একটি যান্ত্রিক কম্পিউটার তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং ইঞ্জিনের নকশা তৈরী করেন। পরবর্তীতে তাঁর তৈরি যান্ত্রিক কম্পিউটার ও নকশার উপর ভিত্তি করেই আজকের আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করা হয়। তার এই এ্যানালটিক্যাল ইঞ্জিন পরিকল্পনায় আধুনিক কম্পিউটারের বদ্ধমূল ধারণা ছিল বলেই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
অপরদিকে, আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয় জন ভন নিউম্যানকে । তিনি ছিলেন একজন হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন গণিতবিদ। নিউম্যান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় অপারেটর তত্ত্ব ব্যবহারের অগ্রদূত। তিনি সেটতত্ত্ব, জ্যামিতি, প্রবাহী গতিবিদ্যা, অর্থনীতি, যোগাশ্রয়ী প্রোগ্রামিং, কম্পিউটার বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন।
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম কি?
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম কি এই বিষয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। তাদের জন্য জানাচ্ছি পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম হলো ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Computer) । এটিই প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার যা প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করে। মূলত এখান থেকেই কম্পিউটারের যুগ শুরু হয়।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী তাদের যুদ্ধের পরিকল্পনা তরান্বিত করার জন্য ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহন করেন। তখন ভন নিউম্যান, প্রেসপার একর্টি জুনিয়র, এবং হারম্যান গোল্ডস্টেইনের মতো কম্পিউটার মহারথীগন মুর স্কুল অব ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন। ৫০ ফুট বাই ৩০ ফুটের ভূ-গর্ভস্থ একটি কক্ষে ৪০ জন বিজ্ঞানী তিন দেয়াল বিশিষ্ট এই কম্পিউটার পরিচালনা করতেন।
কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে?
সাধারণত কম্পিউটার ০২টি মাধ্যমে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে। সেই দুইটি মাধ্যম হলো হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার।
১। প্রথমত, হার্ডওয়্যার: বাহ্যিক আকৃতিসম্পন্ন কম্পিউটারের সকল যন্ত্র, যন্ত্রাংশ ও ডিভাইস সমূহকে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায়।
ক। ইনপুট যন্ত্রপাতি: কী-বোর্ড, মাউস, ডিস্ক, স্ক্যানার, কার্ড রিডার, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি।
খ। সিস্টেম ইউনিট: হার্ড ডিস্ক, মাদারবোর্ড, এজিপি কার্ড, র্যাম ইত্যাদি।
গ। আউটপুট যন্ত্রপাতি: মনিটর, প্রিন্টার, ডিস্ক, স্পিকার, প্রোজেক্টর, হেড ফোন ইত্যাদি।
২। দ্বিতীয়ত, সফটওয়্যার: সমস্যা সমাধান বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে ধারাবাহিকভাবে সাজানো নির্দেশমালাকে কম্পিউটারের ভাষায় প্রোগ্রাম বলে। সফটওয়্যার হলো প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম সমষ্টি যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়্যারকে কার্যক্ষম করে। কম্পিউটারের সফট্ওয়্যারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক। সিস্টেম সফটওয়্যার: সিস্টেম সফট্ওয়্যার কম্পিউটারের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে কাজের সমন্বয় রক্ষা করে ব্যবহারিক প্রোগ্রাম নির্বাহের জন্য কম্পিউটারের সামর্থ্যকে সার্থকভাবে নিয়োজিত রাখে।
খ। এপ্লিকেশন সফটওয়্যার: ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান বা ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রামকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক রকম তৈরি প্রোগ্রাম বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে পাওয়া যায়, যাকে সাধারণত প্যাকেজ প্রোগ্রামও বলা হয়।
সুতরাং একটি কম্পিউটার হলো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর যৌথ সমন্বয়।
কম্পিউটারের ব্যবহার
মানুষ তার কাজের সুবিধার জন্য কম্পিউটারকে কাজে লাগায়। তাই প্রতিনিয়ত কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েই চলছে। নিচে কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরণের ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ
- অফিস ব্যাবস্থাপনা
- শিক্ষা ক্ষেত্রে
- শিল্প ক্ষেত্রে
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে
- কৃষি ক্ষেত্রে
- গবেষণায়
- সামরিক ক্ষেত্রে
- তথ্য পরিসংখ্যানে
- ডিজাইনে
- প্রোগামিং
- মুদ্রণ শিল্পে
- যোগাযোগ ব্যবস্থায়
- ব্যাংকিং জগতে
- সংস্কৃতি ও বিনোদনে
- আদালত
- অর্থবাজারে
- আবহাওয়ার পূর্বাভাসে
পরিশেষে
আজকের আলোচনায় আমরা জানলাম কম্পিউটার কি? কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে? এই বিষয়ে। এক কথায় কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা দ্বারা প্রায় সকল কাজ করা সম্ভব। কম্পিউটার এর রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। ঘরের কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অপরিসীম । সর্বোপরি যোগাযোগ ক্ষেত্রে এটি এনেছে অনন্য বিপ্লব। চিকিৎসা ও মানবকল্যাণেও এটি এক অনন্য সঙ্গী।
আরও পড়ুনঃ
২। প্রসেসর কি?
0 মন্তব্যসমূহ